পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা (ডিসমেনোরিয়া) হলো এক ধরনের সাধারণ উপসর্গ যা অনেক মেয়েদের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত তলপেটে অনুভূত হয় এবং কখনও কখনও পিঠের নিচের অংশে বা উরুতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ব্যথার কারণ হলো জরায়ুর সংকোচন, যা পিরিয়ড চলাকালীন জরায়ুর আস্তরণকে বহিষ্কৃত করতে সাহায্য করে।
পিরিয়ডের ব্যথা সাধারণত মৃদু থেকে মাঝারি হতে পারে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি খুবই তীব্র হতে পারে এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা হলে কী কী করণীয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা হওয়ার মূল কারণ হলো প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ, যা জরায়ুর সংকোচন সৃষ্টি করে। এই সংকোচনের ফলে জরায়ুর রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, যা ব্যথার সৃষ্টি করে। এছাড়া, অন্যান্য কারণেও পিরিয়ডের সময় ব্যথা হতে পারে, যেমন:
১. গরম প্যাড বা হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করুন:
গরম প্যাড বা হট ওয়াটার ব্যাগ পেটে রাখলে তলপেটের পেশি শিথিল হয় এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যা ব্যথা উপশমে সহায়ক। এটি ব্যবহার করলে জরায়ুর সংকোচন কমে যায় এবং ব্যথা কমতে শুরু করে।
২. ব্যায়াম করুন:
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং প্রাকৃতিকভাবে এন্ডোরফিন (এক ধরনের সুখী হরমোন) নিঃসরণ করে, যা ব্যথা উপশমে সহায়ক। ইয়োগা, স্ট্রেচিং, বা ওয়াকিং ব্যায়াম হিসেবে করতে পারেন।
৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন:
পিরিয়ডের সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্রাম নেওয়ার সময় পেটের পেশি শিথিল হয় এবং ব্যথা কমে আসে। পাশাপাশি গভীর নিঃশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে মানসিক চাপও কমানো যেতে পারে।
৪. হালকা খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন:
পিরিয়ডের সময় হালকা এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ফলমূল, শাকসবজি, এবং পূর্ণ শস্য সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন, যা পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখবে এবং পেটের ব্যথা কমাবে।
৫. ম্যাসাজ করুন:
তলপেটে হালকা ম্যাসাজ করলে পেশি শিথিল হয় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, যা ব্যথা কমাতে সহায়ক। ম্যাসাজ করার সময় গরম তেল ব্যবহার করতে পারেন, যা আরামদায়ক হতে পারে।
৬. আদা চা পান করুন:
আদা প্রাকৃতিকভাবে প্রদাহবিরোধী এবং ব্যথা উপশমকারী হিসেবে কাজ করে। আদা চা পানে পেটের পেশি শিথিল হয় এবং পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমাতে সহায়ক হয়।
৭. অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ গ্রহণ করুন:
যদি ব্যথা সহ্য করা না যায়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে আইবুপ্রোফেন (Flamex) বা নাপ্রক্সেন (Naprosyn) এর মতো অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন। তবে, এই ধরনের ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৮. রিলাক্সেশন টেকনিক অনুসরণ করুন:
রিলাক্সেশন টেকনিক যেমন মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া পিরিয়ডের সময় মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, যা ব্যথা উপশমে সহায়ক হতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করতে পারেন যা মনের উপর চাপ কমিয়ে শরীরকে শিথিল করে।
৯. মধু ও লেবুর মিশ্রণ:
মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে পান করলে পিরিয়ডের সময় পেটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি শরীরকে ডিটক্সিফাই করে এবং প্রদাহ কমায়।
১০. পুষ্টিকর সাপ্লিমেন্টস গ্রহণ করুন:
ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন ই, এবং ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্টস পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, এগুলি গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা সাধারণত স্বাভাবিক একটি উপসর্গ হলেও, কিছু সহজ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এটি উপশম করা সম্ভব। গরম প্যাড ব্যবহার, ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে পিরিয়ডের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে যদি ব্যথা অত্যন্ত তীব্র হয় এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে পিরিয়ডের সময় ব্যথা কমানো এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বজায় রাখা সম্ভব।